পঞ্জিকার হিসাবে ফাল্গুন মাস শুরু হচ্ছে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে, আজই আবার বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস। 'বসন্ত আজ আসলো ধরায়,/ফুল ফুটেছে বনে বনে,/ শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে। বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় বহুকাল ধরে, আর বসন্তের আগমনে 'বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/ আমার বাড়ি আসে।
বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার দিন আসায় ফুল নিশ্চয়ই এবার একটু বেশি বেশি গন্ধ ছড়াবে আকুল প্রেমিক-প্রেমিকার মনে। বরাবর বসন্ত উদযাপনের পরদিন ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। সঙ্গে থাকে বইমেলার ভিড়। বৈশ্বিক দুর্যোগ চলমান করোনা মহামারির কারণে এবার সব আয়োজন বন্ধ হয়ে আছে। তাই বলে তো আজ ফাগুনের আগুনলাগা উচ্ছ্বাসে প্রিয়তমের হাতে হাত রেখে প্রিয়ার কোমল হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠবে না, এমন নয়? বাসন্তী আবিরের সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রায় শৈল্পিকতা ফুটে উঠবে নিশ্চয়ই। বাসন্তী রঙের তরুণীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও কম যাবে না। সঙ্গে আবার মিলেছে ভালোবাসার দিন।
ভালোবাসা'- মাত্র চার অক্ষরের এই শব্দের গভীরতা অনেক- 'ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়/যুদ্ধ আসে, ভালোবেসে/মায়ের ছেলেরা চলে যায়'। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে স্মরণে রেখে ভালোবাসা দিবস প্রবর্তিত হলেও দিবসটি এখন তরুণ-তরুণীর ভালোবাসার প্রস্তাব জানাবার দিনে পরিণত হয়েছে। রোমান বিশ্বাস মতে, আজ প্রেমের দেবতা কিউপিড 'প্রেমবাণ' বা শর বাগিয়ে ঘুরে ফিরবে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অনুরাগতাড়িত প্রেমিক-হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়।
আজ হৃদয় গহিনে তারাপুঞ্জের মতো ফুটবে চণ্ডীদাসের অনাদিকালের সুর, 'দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া. গল্প, কবিতা, গান আর উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে আর মানুষের মুখে মুখে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ। কেননা, ভালোবাসাই ধ্রুব।
বসন্তের দিনে ভালোবাসা পাবে দ্বিগুণ মাত্রা। বসন্ত নিয়ে গান-কবিতা বাংলা সাহিত্যে আবহমান কাল ধরেই রচিত হচ্ছে। একা রবীন্দ্রনাথই লিখেছেন বহু গান-কবিতা। বসন্তে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে। এই উৎসবের অন্য নাম বসন্তোৎসব। শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব উদযাপিত হয়।
প্রতি বছর জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও এবার সীমিত আকারে হবে সেই উদযাপন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
তিনি বলেন, এবার সীমিত আকারে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত উৎসব হবে। আগে একসঙ্গে ঢাকার উত্তরা, বাহাদুর শাহ পার্ক, রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান করা হতো। এবার কোনোটাই হবে না। আমাদের কমিটির কিছু সদস্য থাকবেন। সেখানে কিছু কথাবার্তা হবে। এবারের আয়োজন অত্যন্ত ক্ষুদ্র।